পর্ব-২: বায়োফ্লকে সি এন রেশিও/ CN Ratio (C:N) বা কার্বন নাইট্রোজেন অনুপাত নির্ণয় এবং অ্যামোনিয়া নিয়ন্ত্রন


C=CARBON, N=NITROGEN, CN ratio বা C:N  সিএন রেশিও হল কার্বন এবং নাইট্রোজেন এর অনুপাত। আমার জ্ঞানের ভান্ডারে যতুটুকু আছে তাই আপনারদের সাথে শেয়ার করব। যারা এই বিষয়ে বিজ্ঞ দয়া করে আপনার জ্ঞানটুকু শেয়ার করলে কৃতজ্ঞ থাকব। আপনাদের মতামত কমন্টে করে জানাবেন।
বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে গেলে সিএন রেশিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সঠিক সিএন রেশিও বজায় রাখতে না পারলে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে শুধু তিক্ত অভিজ্ঞতাই বাড়বে। তাই শুরু করার আগে এই পদ্ধতির ট্যাকনিক্যাল বিষয় গুলো ভালো ভাবে বুঝে নিতে হবে।

যারা মাছ চাষ করেন তারা পানিতে অ্যামোনিয়ার সমস্যায় পড়েননি এবং অ্যামোনিয়ার কারনে ক্ষতির সম্মুক্ষীন হননি এমন কাউকে পাওয়া দুস্কর। বায়োফ্লকে যেহেতু অধিক ঘনত্বে এবং পানি পরিবর্তন ছাড়াই মাছ চাষ করা হয় তাই সঠিক ব্যবস্থা না নিলে এই পদ্ধতি অ্যামোনিয়া তৈরীর ফ্যাক্টরির মত কাজ করে।

এখন জেনে নিই ট্যাংকে কি ভাবে অ্যমোনিয়া তৈরী হয়। মাছের বৃদ্ধি ও বেঁচে থাকার জন্য আমরা খাদ্য প্রদান করি, উক্ত খাদ্যের উচ্ছিষ্টাংশ এবং মাছের মল মূত্র থেকে ট্যাংকে অ্যামোনিয়ার তৈরী হয়।

এই অ্যামোনিয়া হেটেরোট্রফিক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা প্রথমে নাইট্রাইট এবং পরে নাইট্রেটে রুপান্তরিত হয়। হেটেরোট্রফিক ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতিতে পানিতে প্রতিনিয়ত এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে যাকে। প্রক্রিয়াটির নাম নাইট্রিফিকেশান। পানিতে অ্যামোনিয়া বেড়ে যাওয়ার মানে হচ্ছে, যে পরিমাণ অ্যামোনিয়া তৈরী হচ্ছে সে পরিমাণ অ্যামোনিয়ার নাইট্রিফিকেশান হচ্ছে না। অর্থাৎ উৎপাদিত অ্যামোনিয়াকে নাইট্রাইটে পরিনত করতে যে পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া এবং নাইট্রাইটকে নাইট্রেটে পরিনত করতে যে পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া প্রয়োজন সে পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া নেই। তাই সকল অ্যামোনিয়া কনভার্সন হতে না পেরে পানিতে অ্যামোনিয়া বৃদ্ধি পেলে মাছের খাদ্য গ্রহন কমে যায়, বৃদ্ধি কমে যায়, মাছ মারাও যায় এছাড়াও নানা ধরণের সমস্যা সৃষ্টি হয়।


তার মানে বোঝা গেল যে পানিতে অ্যামোনিয়া নিয়ন্ত্রনের জন্য হেটেরোট্রফিক ব্যাকটেরিয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং বায়োফ্লক সিস্টেম টিকে থাকে এই ব্যাকটেরিয়ার সঠিক বৃদ্ধির মাধ্যমে।
এখন দেখি এই ব্যাকটেরিয়ার বেঁচে থাকা এবং সংখ্যা বৃদ্ধি জন্য কি দরকার। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য যেমন খাদ্য ও সিকিউরিটির প্রয়োজন তেমনি ব্যাকটেরিয়ার বেঁচে থাকা ও সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য খাদ্য ও সিকিউরিটির প্রয়োজন। এখানে ব্যাকটেরিয়ার খাদ্য হল কার্বন, নাইট্রোজেন। ব্যাকটেরিয়ার কার্যক্রম সচল রাখার জন্য কার্বন এবং নাইট্রোজেন এর সঠিক রেশিও বজায় রাখতে হবে। এবং সিকিউরিটির জন্য বায়োফ্লকে কোন ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না। এমন কি লবণ ব্যবহার করতে গেলে ও বুঝতে হবে কোন লবণ ব্যবহার করব। কারন যাদি খাবার লবণ ব্যবহার করি তবে খাবার লবণের আয়োডিনের প্র্রভাবে ব্যাকটেরিয়ার কোষ নষ্ট হয়ে ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয়ে যায়। আমরা জানি আয়োডিন একটি উত্তম জীবানুনাশক।


ব্যাকটেরিয়ার বেঁচে থাকা এবং সংখ্যা বৃদ্ধি জন্য কার্বন নাইট্রোজেন রেশিও কিভাবে বজায় রাখা যাবে তা জানতে হলে, আমাদের জানতে হবে কার্বন এবং নাইট্রোজেন কিসে পাওয়া যায়। খুব সহজ, মাছের খাবারেই কার্বন এবং নাইট্রোজেন থাকে। অর্থাৎ খাবারের কার্বোহাইড্রেটে কার্বন এবং প্রোটিনে নাইট্রোজেন থাকে। তাই দেখা যায় কিছু ক্ষেত্রে শুধু মাত্রা খাবার প্রয়োগ করেই কার্বন নাইট্রোজেন রেশিও বজায় রাখা যায়। যেমন ধরুন আপনি ট্যাংকে ১২:১ কার্বন নাইট্রোজেন অনুপাত রাখতে চান, আপনি ফিড দিচ্ছেন যাতে প্রোটিন এর পরিমান ২৫% সেই ক্ষেত্রে আপনার খাবারের সিএন রেশিও হল ১২:১। কি ভাবে? আসুন জেনে নিই সিএন রেশিও কি ভাবে হিসাব করব।

কার্বন নাট্রোজেন অনুপাত বা সিএন রেশিও ২ পদ্ধতিতে হিসাব করা যায়
১ম পদ্ধতি: ফিডের পরিমানের উপর ভিত্তি করে
২য় পদ্ধতি: পানির টোটাল অ্যামোনিয়া নাইট্রোজেন (TAN) এর পরিমানের উপর ভিত্তি করে


১ম পদ্ধতি: ফিডের পরিমানের উপর ভিত্তি করে সিএন রেশিও নির্ণয়:

ধরুন ১০,০০০ লিটারের একটি ট্যাংকে ২.৫ গ্রাম ওজনের ৮,০০০ শিং মাছের পোনা আছে যার মোট ওজন ২০,০০০ গ্রাম বা ২০ কেজি। এই ২০ কেজি মাছকে যদি ৫% হারে খাবার দেয়া হয় তবে মোট ফিড লাগে ১,০০০ গ্রাম বা ১ কেজি যাতে ৩০% প্রোটিন আছে।
ফিডে শতকরা প্রায় ১০ ভাগ ময়েশ্চার বা আর্দ্রতা থাকে। আর্দ্রতা বাদ দিলে বাকী যা থাকে তা হল ড্রাই মেটার বা শুষ্ক খাবার। ফিডের ড্রাই মেটারকেই (শুষ্ক খাবার) মূল খাবার হিসেবে গণ্য করা হয়। তহলে ১,০০০ গ্রাম ফিডে ড্রাই মেটার বা শুষ্ক খাবার পাই:
=১০০০ - ১০০০ এর ১০%
=১০০০-১০০
=৯০০ গ্রাম শুষ্ক ফিড/খাবার।
ড্রাই মেটার বা শুষ্ক ফিড থেকে ফিডে থাকা অন্য সব উপাদান হিসেব করা হয়। এখানে দেখা যাচ্ছে আমাদের ফিডে ৯০০ গ্রাম মূল খাবার আছে, তার মানে মাছ ৯০০ গ্রাম খেতে পারে। আবার মাছ যা খাচ্ছে তার শতকরা ৩০ ভাগ হজম হয়ে মাছের দেহে ব্যবহৃত হয় বাকী ৭০ ভাগ খাবার অপচয় হয় এবং পানিতে বিভিন্নভাবে মিশে যায়। তাহলে পানিতে ফেরত আসল ৭০% ফিড মানে ৯০০x৭০%= ৬৩০ গ্রাম।

ফিড থেকে পানিতে যোগ হওয়া কার্বন এর পরিমান নির্ণয়:
ফিডে প্রোটিন যাই থাকুন না কেন কার্বন সব সময় প্রায় ৫০% কার্বন আছে বলে ধরা হয়। তাহলে ৬৩০ গ্রাম ফিডে কার্বনের পরিমান হবে ৬৩০x৫০%=৩১৫ গ্রাম। অর্থাৎ মাছকে ১ কেজি ফিড দেয়ার মাধ্যমে আমরা পানিতে কার্বন যোগ করি প্রায় ৩১৫ গ্রাম।

ফিডে কার্বন নির্ণয়ের মূল সূত্র:

মাছের ফিডের ওজন x ৯০%(ড্রাই মেটার) x ৭০% (ফিড বর্জ্য বা অপচয় হয়ে পানিতে মিশে) x ৫০% (কার্বহাইড্রেডে ৫০% কার্বণ থাকে)


ফিড থেকে পানিতে যোগ হওয়া নাইট্রোজেন এর পরিমান নির্ণয়:
এখন ফিডে যেহেতু ৩০% প্রোটিন আছে তাহলে পূর্বের হিসাব থেকে প্রাপ্ত ৬৩০ গ্রাম ফিডে প্রোটিনের পরিমান হবে ৬৩০x৩০% = ১৮৯ গ্রাম। আবার প্রোটিনে শতকরা প্রায় ১৬ ভাগ (১০০/১৬=৬.২৫ গ্রাম) নাইট্রোজেন থাকে। তাহলে ১৮৯ গ্রাম প্রোটিনে নাইট্রোজেন এর পরিমান হবে ১৮৯x১৬% = ৩০.২৪ গ্রাম। অর্থাৎ মাছকে ১ কেজি ফিড দেয়ার মাধ্যমে আমরা পানিতে ৩০.২৪ গ্রাম নাইট্রোজেন যোগ করি।
ফিডে নাইট্রোজেন নির্ণয়ের মূল সূত্র:

মাছের ফিডের ওজন x ৯০%(ড্রাই মেটার) x ৭০% (ফিড বর্জ্য বা অপচয় হয়ে পানিতে মিশে) x ৩০% (খাদ্যে প্রোটিনের পরিমান ৩০%) x ১৬% (প্রোটিনে প্রায় ১৬ ভাগ নাইট্রোজেন থাকে)


ফিড এর সিএন রেশিও নির্ণয়:
এখন দেখা যাচ্ছে যে মাছকে ১ কেজি ৩০% প্রোটিন সমৃদ্ধ ফিড দেয়ার মাধ্যমে আমরা পানিতে
৩১৫ গ্রাম কার্বন এবং ৩০.২৪ গ্রাম নাইট্রোজেন যোগ করি। তাহলে কার্বন নাইট্রোজেন বা সিএন রেশিও হবে। C:N = ৩১৫:৩০.২৪ = ১০.৪১:১। আমরা যদি ১০:১ সিএন রেশিও বজায় রাখতে চাই তাহলে বাইরে থেকে কোন কার্বন সোর্স যোগ করতে হয়না।


বায়োফ্লকে মাছ চাষের শুরুর দিকে ১৫:১ এবং পরবর্তীতে ১০:১-১২:১ সিএন রেশিও বজায় রাখলে ভালো ফল পাওয়া যায়। আমরা এখন দেখব উপরোক্ত ফিড প্রয়োগ করে কিভাবে ১৫:১ সিএন রেশিও বজায় রাখা যায়। ১৫:১ মানে হল কার্বন দিতে হবে নাইট্রোজেন এর ১৫ গুন। অর্থাৎ নাইট্রোজেন যদি ১ গ্রাম হয় তবে কার্বন দিতে হবে ১৫ গ্রাম।

ইতোমধ্যে আমরা হিসেব করে দেখেছি যে ৩০% প্রোটিন সমৃদ্ধ ১ কেজি ফিড দেয়ার মাধ্যমে আমরা পানিতে নাইট্রোজেন যোগ করছি ৩০.২৪ গ্রাম। ১৫:১ সিএন রেশিও করার জন্য কার্বন প্রয়োজন =(কাঙ্খিত সিএন রেশিওতে কার্বন এর পরিমান X ফিডে নাইট্রোজেন এর পরিমান) =১৫x৩০.২৪= ৪৫৩.৬ গ্রাম। এখন যেহেতু ফিড থেকে  ৩১৫ গ্রাম কার্বন পানিতে যোগ হচ্ছে তাহলে আমাদের অতিরিক্ত কার্বন যোগ করতে হবে = ৪৫৩.৬-৩১৫ = ১৩৮.৬ গ্রাম।


পানিতে সিএন রেশিও সমন্বয় সাধন (১৫:১):
কার্বন সমৃদ্ধ উপাদান প্রয়োগের পরিমান = (অতিরিক্ত যে পরিমান কার্বন প্রয়োজন x ১০০)/ব্যবহৃত উপাদানে কার্বন এর পরিমান।

কার্বন এর জন্য আমরা চিটাগুড়, গুড়, গমের আটা, চিনি, গ্লুকোজ দেয়ার মাধ্যমে দিতে পারি। বায়োফ্লকে আমরা সাধারণত কার্বন হিসেবে চিটাগুড় ব্যবহার করি। গো-খাদ্যে ব্যবহৃত চিটাগুড়ে প্রায় ২২-২৪% কার্বন থাকে।

এখানে আমাদের অতিরিক্ত কার্বন প্রয়োজন ১৩৮.৬ গ্রাম, এই কার্বন সরবরাহের জন্য আমরা চিটাগুড় প্রয়োগ করব। ধরি, চিটাগুড়ে ২৪% কার্বন আছে। তাহলে আমাদের চিটাগুড় লাগবে = (১৩৮.৬x১০০)/২৪=৫৭৭.৫ গ্রাম। অর্থাৎ, ১৫:১ সিএন রেশিও বজায় রাখতে হলে আমাদের ১ কেজি ৩০% প্রোটিন সমৃদ্ধ ফিড এর জন্য ৫৭৭.৫ গ্রাম চিটাগুড় প্রয়োগ করতে হবে। এই পরিমান চিটাগুড় প্রতিবার খাবার প্রাদানের সময় সমান ভাগে ভাগ করে দিতে হবে। যেমন খাবার যদি চার বারে দেয়া হয় অর্থাৎ ১ কেজি ফিড ২৫০ গ্রাম ফিড ৪ বারে এবং চিটাগুড় ৫৭৭.৫/৪=১৪৪.৩৮ গ্রাম করে ৪ বারে দিতে হবে।

সিএন রেশিও ১২:১: ৩০% প্রোটিন সমৃদ্ধ ফিডের জন্য কার্বন নাইট্রোজেন রেশিও যদি ১২:১ করতে হয় তবে কার্বন লাগবে =৩০.২৪x১২= ৩৬২.৮৮ গ্রাম। যেহেতু ফিড থেকে  ৩১৫ গ্রাম কার্বন পানিতে যোগ হচ্ছে তাহলে আমাদের অতিরিক্ত কার্বন যোগ করতে হবে = ৩৬২.৮৮-৩১৫ = ৪৭.৮৮ গ্রাম। অর্থাৎ ১২:১ রেশিও মেইনটেইন করতে আমাদের ৪৭.৮৮ গ্রাম পানিতে মেশাতে হবে।

সিএন রেশিও ১০:১: ৩০% প্রোটিন সমৃদ্ধ ফিডের জন্য কার্বন নাইট্রোজেন রেশিও যদি ১০:১ করতে হয় তবে কার্বন লাগবে =৩০.২৪x১০= ৩০২.৪ গ্রাম। যেহেতু ফিড থেকে  ৩১৫ গ্রাম কার্বন পানিতে যোগ হচ্ছে তাহলে আমাদের অতিরিক্ত কার্বন যোগ করতে হবে = ৩০২.৪-৩১৫ = -১২.৬ গ্রাম। অর্থাৎ ১০:১ রেশিও মেইনটেইন করতে আমাদের বাড়তি কোন কার্বন সোর্স পানিতে যোগ করার প্রয়োজন নেই।

উপরোক্ত নিয়ম অনুযায়ী কাঙ্খিত সিএন রেশিও মেইটেইন করার জন্য প্রয়োগকৃত ফিডের উপর ভিত্তি করে যে পরিমান চিটাগুড় পানিতে যোগ করতে হবে তা নির্ণয় করে প্রতি বার ফিড প্রয়োগের সময় সেই পারিমান চিটাগুড় পানিতে মিশাতে হবে।


২য় পদ্ধতি: পানির টোটাল অ্যামোনিয়া-নাইট্রোজেন (TAN) এর পরিমানের উপর ভিত্তি করে
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় ফিডের প্রোটিন মান অজানা আবার সঠিক মান নিয়ন্ত্রন না করার কারণে ফিডের প্যাকেটে উল্লেখিত প্রোটিনমানে তারতম্য দেখা যায়। এই সব ক্ষেত্রে ফিডের পরিমানের উপর ভিত্তি করে সিএন রেশিও নির্ণয় করলে সঠিক রেশিও পাওয়া যায় না। এসব ক্ষেত্রে পানির টেন নির্ণয় করে কার্বন প্রয়োগ করতে হয়। আসুন এখন টোটাল অ্যামোনিয়া নাইট্রোজেন (টেন) অনুসারে কি পারিমান কার্বন জাতীয় উপাদান প্রয়োগ করতে হবে তা হিসাব করি। এই পদ্ধতিতে ট্যাংকে পানির পরিমান, পানির পিএইচ, পানির তাপমাত্রা এবং TAN এর পারিমান জানতে হবে।

মরে করি ,
ট্যাংকে পানির পরিমান= ১০,০০০ লিটার
পানির পিএইচ= ৮
তাপমাত্রা= ২৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড
TAN= ২পিপিএম = ০.০০২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে
কাঙ্খিত সিএন রেশিও= ১o:১
কার্বনের উৎস= চিটাগুড়
চিটাগুড়ে কার্বনের পরিমান= ২৪%

উপরের তথ্য অনুসারে ট্যাংকের ১০,০০০ লিটার পানির মোট TAN হবে,
=(ট্যাংকে মোট পানি X পানির TAN (গ্রামে)
= (১০,০০০ X ০.০০২)
= ২০ গ্রাম

ট্যাংকে কার্বন প্রয়োজন,
=কাঙ্খিত কার্বন রেশিও X পানিতে নাইট্রোজেনে এর পরিমান
=১০ X ২০
=২০০ গ্রাম

২০০ গ্রাম কার্বন এর জন্য চিটাগুড় দরকার,
=(অতিরিক্ত যে পরিমান কার্বন প্রয়োজন x ১০০)/ব্যবহৃত উপাদানে কার্বন এর পরিমান।
= (২০০X১০০)/২৪
=৮৩৩.৩৩ গ্রাম চিটাগুড় এর প্রয়োজন।

এই পরিমান চিটাগুড় পানিতে একবারে না মিশিয়ে প্রতি বার ফিড দেয়ার সময় সমান ভাগে ভাগ করে মিশাতে হবে। যেমন দিনে যদি ৩ বার ফিড দেয়া হয় তবে =৮৩৩/৩=২৭৭.৫ গ্রাম চিটাগুড় প্রতি বার ফিড দেয়ার সময় পানিতে মিশাতে হবে। অথবা ২ ঘন্টা পর পর সমান ভাগে ভাগ করে পানিতে মিশাতে হবে। চিটাগুড় প্রয়োগের ৩-৪ ঘন্টা পরে অ্যামোনিয়া পরীক্ষা করতে হবে।

পানিতে মাত্রাতিরিক্ত অ্যামোনিয়া হলে দ্রুত অ্যামোনিয়া কমানোর জন্য মোলাসেসের পরিবর্তে চিনি মেশানো যেতে পারে। আবার বায়োফ্লকে, ফ্লকের পরিমান প্রতি লিটারে যদি ৪০ মিলি এর অধিক হয় তবে ফ্লক কিছু পরিমান কমাতে হবে এজন্য ট্যাংকের তলদেশ থেকে কিছু ময়লা বা Sludge বের করে দিতে হবে অথবা কিছু পরিমান (৪%-৫%) ফ্লক যুক্ত পানি যে ট্যাকে ফ্লক কম আছে সেই ট্যাংকে স্থানান্তর করে ফ্লক বেড়ে যাওয়া ট্যাংকে সেই পরিমান নতুন পানি যোগ করতে হবে। সিএন রেশিও সঠিক ভাবে বজায় রাখলে অ্যামোনিয়া ও নিয়ন্ত্রনে থাকবে। কিন্তু কোন কারনে পানিতে অ্যামোনিয়া নিন্ত্রনের বহিরে চলে গেলে তাহলে কিছু পানি পরিবর্তন করে নতুন পানি যোগ করতে হবে এবং নতুন ভাবে ফ্লকও তৈরী করতে হতে পারে। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে শূণ্য পানি পরিবর্তনেই (Zero Water Exchange) বায়োফ্লকের সাফল্য।

Comments

  1. খুবই ভাল লিখেছেন। এ সম্পর্কিত আরো তথ্য থাকলে দয়া করে লিখবে।

    ReplyDelete
  2. খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন এজন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

    ReplyDelete
  3. সাদা চিনিতে কার্বন কি পরিমাণ থাকে?

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

পানির পি.এইচ নিয়ন্ত্রন

পুকুরের পানিতে অক্সিজেন ঘাটতির কারন, লক্ষণ ও প্রতিকার

পুকুরের পানিতে লালচে/সবুজ স্তর এর সমাধান