পুকুরের পানিতে অক্সিজেন ঘাটতির কারন, লক্ষণ ও প্রতিকার
মাছের বেঁচে থাকা, বৃদ্ধি, পুকুরের জৈবিক অক্সিজেন চাহিদা (BOD) মিটানোর জন্য অক্সিজেন প্রয়োজন। দ্রবীভূত অক্সিজেন মাছের শ্বাস-প্রশ্বাসে প্রভাব সৃষ্টি করে এবং অ্যামোনিয়া,
নাইট্রাইট, হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাসের বিষাক্ততাকে প্রভাবিত করে । পুকুরে পানির অক্সিজেন মাত্রা ৫-৮ পিপিএম থাকলে মাছের বেঁচে থাকা, খাদ্য গ্রহণ, খাদ্য রূপান্তর হার (FCR) ভালো থাকে এবং সার্বিকভাবে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পায় ।
অপরদিকে পানিতে অক্সিজেন মাত্রা কমে গেলে মাছের শ্বাস-প্রশ্বাস, জৈবিক ক্রিয়া ও খাদ্য গ্রহনের হার কমে যায়। মাছের বৃদ্ধির হার কমে যায় ও মাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় । ফলে মাছ সহজেই পরজীবি দ্বারা আক্রান্ত ও রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয় ।
সুতরাং পানির দ্রবীভূত অক্সিজেন মাত্রা সম্পৃক্তি সীমায় (saturation Level) রাখতে পারলে মাছের জৈবিক ও বিপাকীয় কার্য বৃদ্ধি পায় তখন উচ্চ হারে উৎপাদন পাওয়া যায় ।
পুকুরে
অক্সিজেন এর উৎস্য: ফাইটোপ্লাংক্টনের
সালোক সংশ্লেষণের মাধ্যমে ও বায়ুমন্ডলের অক্সিজেন ব্যাপন প্রক্রিয়ায় দ্রবীভূত হওয়ার ফলে পুকুরের পানিতে অক্সিজেন বৃদ্ধি পায় ।
পুকুরে অক্সিজেন এর মাত্রা ৪ পিপিএম এর নিচে নেমে গেলে মাছ চাষে সমস্যা দেখা যায়। মাছ ক্লান্তভাবে পানির ওপর ঘোরাফেরা করে এবং খাবি খায়। অক্সিজেন এর খুব বেশি অভাব হলে এক পর্যায়ে মাছ মারা যেতে শুরু করে, মৃত মাছের মুখ খোলা থাকে এবং ফুলকা কেটে যায়।
পানিতে অক্সিজেন হ্রাসের কারণ:
১. অধিক ঘনত্বে
মাছ ও চিংড়ির চাষ
২. পানিতে অবস্থিত
জলজ জীবের শ্বাস প্রশ্বাস
৩. মাটিতে লৌহের
পরিমান বেশি থাকা
৪. কাঁচা গোবর
বেশি পরিমানে ব্যবহার
৫. অত্যধিক তাপমাত্রা,
বাতাসহীন আবহাওয়া
৬. আকাশ মেঘলা
ও অধিক বৃষ্টিপাত
৭. দীর্ঘ সময়
সূর্যালোকের অনুপস্থিতি
৮. অধিক পরিমানে
ক্ষতিকারক গ্যাসের উপস্থিতি
৯. ফাইটোপ্লাংটনের হঠাৎ
মৃত্যু বা অ্যালগাল ব্লুম
ধ্বংসের কারনে
১০. জলাশয়ের গভীরতা
অধিক হলে
১১. পুকুরে অধিক
পরিমানে জৈব পদার্থের উপস্থিতি
বা জৈব সারের ব্যবহার
১২. অতিরিক্ত খাদ্য
প্রয়োগের ফলে খাদ্যের পচঁন
লক্ষণ:
১. রাতে ও
ভোরে মাছ ও চিংড়ি
অস্বাভাবিক ভাবে পানির উপরের
স্তরে/ পাড়ের কাছে চলে আসে
ও
খাবি খায়
২. মাছ ও
চিংড়ি খাদ্য গ্রহনে অনিহা দেখা যায় ও
দূর্বল দেখায়
৩. তীব্র অক্সিজেন
ঘাটতিতে মাছ ব্যাপক হারে
মারা যায়
৪. মৃত মাছের
মুখ হা করা থাকে,
অনেক সময় মৃত মাছের
গায়ে রক্তের ছিটা দেখা যায়
৫. মাছের ফুলকা
ফ্যাকাসে দেখা যায়, তলদেশে
বসবাসকারী মাছ যেমন মৃগেল,
কমন কার্প মাছ
মারা
যায়।
প্রতিকার:
১. তাৎক্ষণিক সমাধান
হিসেবে প্রতি শতকে ৭-৮ গ্রাম হারে ক্যামিকেল অক্সিজেন বৃদ্ধিকারক উপাদান যেমন: অক্সিফ্লো/অক্সিকেম গ্রানুলার প্রয়োগ করতে হবে।
সমস্যা রাতে হলে, রাত
১২-৩ টা বা
ঘুমাতে যাওয়ার আগে প্রতি একরে
৭০০-৮০০ গ্রাম অক্সিফ্লো/অক্সিকেম ট্যাবলেট প্রয়োগ করা যেতে পারে। অথবা
২. পুকুরে অক্সিজেন ইনজেকটর মেশিন বা অ্যারেটরের সাহায্যে দ্রুত অক্সজেন এর পরিমান বাড়ানো
৩. ডেকসি বা বাঁশ দিয়ে পুকুরের পানি আন্দোলিত করা
৪. দূর্বলতা কাটানোর
জন্য ভিটামিন সি প্রয়োগ করা
যেতে পারে।
৫. খাদ্য ও সার প্রয়োগ কয়েক দিন বন্ধ রাখতে হবে
৬. বাইরে থেকে পরিষ্কার ও অক্সিজেন সমৃদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা যেতে পারে
৭. পানির উপর ঘন সবুজ স্তর থাকলে তা তুলে ফেলতে হবে
৮. সমস্যা যাদি
কয়েক দিন পরপর হতেই
থাকে তাবে মাছের ঘনত্ব
বেশি থাকলে কমাতে হবে। পানি
বাড়াতে হবে। এবং চুন/জিওলাইট ও গ্যাস রিমোভার প্রয়োগ
কারতে হবে।
অক্সিফ্লো জাতীয় টেবলেট কি ভাবে দিতে হবে ?
ReplyDeleteছিটিয়ে, পানিতে গুলে, নাকি অন্য কোন পদ্ধতিতে।
ছিটিয়ে দিতে হব্র
Deleteঅক্সিফ্লো জাতীয় টেবলেট কি ভাবে দিতে হবে?
ReplyDeleteThis comment has been removed by the author.
ReplyDelete১ টা মাছের ২৪ ঘন্টায় কতটুকু অক্সিজেন দরকার হয়?
ReplyDelete